আগামী শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই স্বাক্ষরের দুই দিন আগে আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে মিলিত হবে। বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক দল ও জোটের কাছ থেকে একজন করে প্রতিনিধির নাম চেয়েছে কমিশন। তবে চিঠিতে বৈঠকের বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বৈঠকের চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের তরফে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের কাছে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়েছে। এসব দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার এই সনদ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই ৮৪ দফার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর স্বাক্ষরের জায়গা রাখা হয়েছে। তবে, বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
এদিকে, জুলাই সনদে জাতি গঠনের ইতিহাস ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে দাবি করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)। দলটির সমন্বয়ক মাসুদ রানা এক বিবৃতিতে বলেছেন, সংবিধানের চারটি মূলনীতি ঠিক না রাখলে সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি পাওয়ার পর তিনি অঙ্গীকারনামা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মাসুদ রানা বলেন, সনদের প্রথম পয়েন্টে ‘…এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব’ এমন অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া বেশিরভাগ দলের পক্ষে এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়। একইসাথে সনদকে সংবিধানে সংযুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি না থাকলেও, ভিন্ন ভিন্ন মতসহ লিখিত একটি দলিল কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হতে পারে, সে ব্যাপারেও তিনি স্পষ্ট হতে পারেননি। তিনি সনদে থাকা, “আমরা জুলাই সনদ ২০২৫ এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না…” এমন অঙ্গীকারকেও অযৌক্তিক ও অনভিপ্রেত বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া, সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ক আলোচনা এই সনদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তারা ওয়াক আউট করেছিলেন বলেও জানান তিনি। মাসুদ রানা সার্বিক দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছেন, অন্যথায় তাদের পক্ষে এই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে না।
