দুর্নীতির অভিযোগে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় রোববার রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে প্রায় এক ট্রিলিয়ন পেসো আত্মসাতের অভিযোগ ঘিরে দেশের নাগরিকরা সড়কে উত্তাল।
‘ট্রিলিয়ন পেসো মার্চ’ নামে এই বিক্ষোভের উদ্দেশ্য ২০২৩ সালে জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্প থেকে প্রায় ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় এক ট্রিলিয়ন পেসো) আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরা। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস এই অভিযোগ করেছে।
বিক্ষোভের দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যও রয়েছে। ১৯৭২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মারকোস ফিলিপাইনে মার্শাল ল’ জারি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেষ হয়। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট বংবং মারকোস জুনিয় বলেছেন, জনগণের ক্ষোভ স্বাভাবিক এবং তিনি তাদের সঙ্গে সমবেদনা প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে সম্ভাবনা ঘিরে রাতেই দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সহিংসতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়।
সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সংসদ সদস্যদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি ও চরম মূল্যস্ফীতির প্রতিবাদে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। দেশটিতে এই বিক্ষোভে পুলিশি সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
ম্যানিলায় রোববারের বিক্ষোভে যোগ দেওয়া লোকজনের হাতে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যায়। এ সময় তারা ‘‘আর নয়, অনেক হয়েছে, কারাগারে পাঠাও’’ লেখা ব্যানার নিয়েও বিক্ষোভ করেন এবং দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচারেরে দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
ছাত্র আন্দোলনকর্মী আলথিয়া ট্রিনিদাদ মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘‘আমরা দারিদ্র্যের মাঝে ডুবে আছি। আমাদের ঘরবাড়ি, জীবন ও ভবিষ্যৎ হারাচ্ছি, অথচ তারা আমাদের করের টাকা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি কেনে, বিদেশ ভ্রমণ করে এবং বিশাল বিশাল ব্যবসা করে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।’’
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি ব্যবস্থার দিকে যেতে চাই, যেখানে মানুষ আর শোষণের শিকার হবে না। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, রোববার সকালের দিকে রাজধানী ম্যানিলার লুনেটা পার্কে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোস জুনিয়রের দেওয়া বার্ষিক ভাষণে ‘ভূতুড়ে অবকাঠামো প্রকল্পের’ এই কেলেঙ্কারি ঘটনা তুলে ধরার পর থেকেই দেশটিতে জনগণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পরে দেশের ৯ হাজার ৮৫৫টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেন মারকোস। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ছিল ৫৪৫ বিলিয়ন পেসো (৯.৫ বিলিয়ন ডলার)।
দেশটির ধনকুবের দম্পতি সারা ও প্যাসিফিকো ডিসকায়ার পরিচালিত একাধিক নির্মাণ কোম্পানি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের চুক্তি পেয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে এই দম্পতির মালিকানাধীন ইউরোপীয় ও মার্কিন বিলাসবহুল গাড়ি এবং এসইউভির ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর জনতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
প্রেসিডেন্ট মারকোস বলেন, এই কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে জনগণের বিক্ষোভকে তিনি দোষারোপ করেন না। তবে তিনি বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
